Cashless Treatment: পরিবারের অসুস্থ মুমূর্ষু কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য একের পর এক হাসপাতালে দোরে দোরে ঘুরছেন, অথচ চিকিৎসা মিলছে না। তার পিছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, যেকোনো বড় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেই তারা প্রথমেই তাদের টেবিলে একটা বিরাট অংকের মোটা টাকা জমা দেওয়ার দাবি (Hospital Demand Huge Amount for Treatment) করে। ওই হাসপাতালের দাবি মত যদি মোটা পরিমাণ টাকা জমা দিতে না পারেন, তাহলে অসুস্থ সেই প্রিয়জনকে আর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে ফের ঘুরতে হয় পরের আরেক হাসপাতাল। এটাই দেশের বাস্তব চিত্র। সাধারণ মানুষ সব থেকে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়ে যান, যখন চিকিৎসার জন্য নিজে বা তার পরিবারের কোনো প্রিয়জনকে নিয়ে তিনি একের পর এক হাসপাতালে ঘুরতে থাকেন। এতো গেল একটা দিক।
অপর দিক হলো, যদি আপনার কাছে হেলথ ইন্সুরেন্স করা থাকে বা কোনো চিকিৎসা বীমা থাকে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রথমে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে অর্থাৎ টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। তারপরে সেই হাসপাতাল থেকে সম্পূর্ণ বিল এবং নথিপত্র নিয়ে বীমা কোম্পানিকে জমা দেওয়ার পর বীমা কোম্পানি সব কিছু খতিয়ে দেখে টাকা দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে অধিকাংশ মানুষের একসঙ্গে এত টাকা দিয়ে অনেক সময় চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। ফলে স্বাস্থ্য বীমা করা থাকলেও অনেক সময় দেখা যায়, সেই সুবিধা ভোগ করতে পারেন না দেশবাসী। এবার সেই পরিস্থিতির বিরাট এক বদল আসতে চলেছে। যার ফলে দেশের মানুষ অন্তত কিছুটা হলেও উপকৃত হতে পারেন। এবার সমস্ত মানুষই যে কোনো হাসপাতালে গিয়ে ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা পেতে পারেন। General Insurance Council এর তরফে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই এই নতুন ব্যবস্থা চালু হবে।
যেখানে Health Insurance এর তালিকাভুক্ত হাসপাতালে যে ক্যাশলেস পরিষেবা কিছু ক্ষেত্রে পাওয়া যেত, এখন আর সেরকমটি হবে না। সমস্ত হাসপাতালেই Cashless চিকিৎসা পরিষেবা পাবেন সকলে। এই পর্যন্ত শুনে আবার মনে হতে পারে, এটা কি রকম? এই বিষয়ে একবার বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
কিভাবে Cashless Treatment সব হাসপাতালে পাওয়া যেতে পারে?
এক্ষেত্রে জেনারেল ইন্সুরেন্স কাউন্সিল সূত্রে জানা যাচ্ছে, দেশের সমস্ত হাসপাতালকেই স্বাস্থ্য বীমার নেটওয়ার্ক এর মধ্যে আনার জন্যই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে। যেখানে স্বাস্থ্যবীমার তালিকাভুক্ত নয় এরকম হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ যত শীঘ্র সম্ভব মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সেই ব্যাপারে স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানি গ্যারান্টি দেবে (Health Insurance Company Guarantor)
এতদিন পর্যন্ত বীমার গ্রাহকেরা হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালে নগদবিহীন চিকিৎসার সুবিধা পেতেন। এখন নতুন ব্যবস্থা চালু হলে একজন গ্রাহক স্বাস্থ্য বীমায় 40000 এর বেশি হাসপাতালে Cashless চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। এই নগদবিহীন চিকিৎসার সুবিধা পেলে দেশের অধিকাংশ মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন। তালিকার বাইরে থাকা হাসপাতালে চিকিৎসা করালে যাবতীয় বিল প্রথমেই সেই ব্যক্তিকে নিজের থেকে এতদিন পর্যন্ত মেটাতে হতো। পরে সেই নথি বীমা কোম্পানির কাছে দাখিল করলে তারা খতিয়ে দেখে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতো। আর এর ফলে প্রচুর সমস্যা তৈরি হচ্ছিল বলে জানিয়েছেন জেনারেল ইন্সুরেন্স কাউন্সিলের আধিকারিকরা। তাদের কথায়, বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে নথিতে কারচুপি করা হয়েছে গ্রাহকদের একাংশের তরফে। যাতে অতিরিক্ত বীমার টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায়। আবার কখনো দেখা গেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিলে ব্যাপক অসঙ্গতি। আর তার জন্যই বীমার টাকা পেতেও প্রচুর সময় লেগে যেত।
এই প্রসঙ্গে এক বীমা কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর কথায়, নতুন ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে আরো সচেতনতা বাড়াতে হবে (Increase About Health Insurance Consciousness) আরো বেশি হাসপাতালের সঙ্গে MOU চুক্তিতে সই করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তবে নতুন এই ব্যবস্থা চালু হলে কোনো সমস্যা থাকবে না বলেই জানা গিয়েছে। আর সমস্ত হাসপাতালে নগদবিহীন চিকিৎসা অর্থাৎ ক্যাশলেস চিকিৎসা চালু হলে খরচও অনেকটা কমে যাবে বলেই ওয়াকিবহাল মহল মনে করে। তবে ক্যাশলেস চিকিৎসা পেতে গেলে গ্রাহককে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে। একবার সেই নিয়মাবলী দেখে নেওয়া যাক।
১. নগদবিহীন বা Cashless চিকিৎসার সুবিধা পাওয়ার জন্য বীমা কোম্পানিকে ৪৮ঘণ্টা আগে চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের বিষয়ে জানাতে হবে।
২. Emergency অর্থাৎ জরুরি বিভাগের ক্ষেত্রে ভর্তি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বীমা কোম্পানিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়টি জানাতে হবে।
৩. Health Insurance বা স্বাস্থ্য বীমার শর্ত অনুযায়ী গ্রাহক যাবতীয় সুবিধা পাবেন। অতিরিক্ত কোনো দাবি এখানে করা যাবে না।