দেশের ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট (Income Tax Department) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় আচমকা হানা দিয়ে থাকে। এই ধরনের ঘটনা আমরা আকছার দেখতে পাই। দেশের আয়কর আইন অনুযায়ী যখনই কোনো ব্যক্তি, ব্যবসায়ী বা সংস্থার লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে সন্দেহের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখনই ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্ট সেখানে রেইড করে। যদি অবৈধ কোনো কিছু পাওয়া যায়, তাহলে আয়কর আইন অনুযায়ী সেই ব্যক্তি বা সংস্থার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ঠিক সেই কারণেই দেশবাসীর প্রত্যেকেরই আয়কর আইন (Income Tax Law) সম্বন্ধে কিছুটা অন্তত জ্ঞান থাকার প্রয়োজন।
বহু সময় ধরেই অনেকে জেনে আসছেন, অন্যান্য যে কোনো সম্পদের ক্ষেত্রে আয়কর আইন বলবৎ করা হয়। কিন্তু কৃষি জমি (Agricultural Land) যদি বিক্রি করা হয় বা সেখান থেকে লাভের পরিমাণ উঠে আসে, তাহলে আয়কর আইনের আওতায় পড়ে না। এই কথাটি কিন্তু সর্বক্ষেত্রে সঠিক নয়। অর্থাৎ কৃষিজমি হলেই যে তা ইনকাম ট্যাক্স এর আওতায় পড়বে না বা সেখানে আয়কর আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না, অথবা আয়কর দিতে হবে না, এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। তাই যাদের কৃষি জমি রয়েছে, তাদের এই ইনকাম ট্যাক্স এর রুলস সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনে নেওয়া দরকার:
📖 Contents
কৃষি জমি সংক্রান্ত আয়কর আইনটি কি? (Income Tax Rules about Agricultural Land)
কৃষি জমি সংক্রান্ত আয়কর আইনে বলা আছে, কৃষি জমিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আয়কর আইনের ২ (১৪) ধারায় বর্ণনা করা আছে। দুই ধরনের কৃষি জমি অর্থাৎ ১) গ্রামীণ এলাকার কৃষি জমি (Rural Agricultural Land) এবং ২) শহরে এলাকার কৃষি জমি (Urban Agricultural Land) এবার গ্রামীণ এলাকায় কৃষি জমি থেকে যেকোনো ভাবে লাভ উঠে আসলে, তা বিক্রয় করেই হোক বা অন্য কোনো পদ্ধতিতে, তা ইনকাম ট্যাক্স এর আওতায় পড়ে না বা আয়কর আইনের বিবেচনার মধ্যে নয়। কিন্তু যদি শহুরে এলাকায় কৃষি জমি থাকে, সেই জমি থেকে লাভ উঠে আসলে তা কৃষি জমি হিসেবে গণ্য করা হয় না। বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিতে বহু শহরে এলাকা রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন জায়গায় কৃষি জমি রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম ফসল চাষ করা হয়ে থাকে। কিন্তু তাহলেও সেই জমি কৃষি জমি হিসেবে গণ্য করা হয় না। এই বিষয়ে আরো একটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কোন কৃষিজমি ইনকাম ট্যাক্সের আওতার মধ্যে পড়ে? (Income Tax Rules of Agricultural Land):
আয়কর আইন অনুযায়ী যদি কোনো ব্যক্তি পুরসভা (Municipality) নোটিফায়েড অথরিটি এরিয়া(Notified Authority Area) ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এরিয়া (Cantonment Board Area) টাউন এরিয়া কমিটি(Town Area) সংলগ্ন এলাকায় চাষ যোগ্য জমি থাকে এবং সেই এলাকার জনসংখ্যা যদি ১০ হাজারের বেশি হয়, তাহলে সেই জমিকে কখনোই আয়কর আইন অনুযায়ী চাষযোগ্য জমি হিসেবে গণ্য করা হয় না। এক্ষেত্রে মিউনিসিপ্যালিটি এরিয়া, নোটিফায়েড বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এরিয়ার জনসংখ্যা যদি ১০০০০ এর বেশি অথচ ১ লক্ষের কম হয়, তাহলে সেই এলাকার ২ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো চাষযোগ্য জমি কৃষি জমি হিসেবে গণ্য হয় না। আবার সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসংখ্যা যদি ১ লক্ষের বেশি হয় আবার ১০ লক্ষের কম হয়, তাহলে সেখানকার ৬ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকার মধ্যে কোনো জমি কৃষি জমি হিসেবে গণ্য হয় না। ঠিক সেইভাবেই কোনো মিউনিসিপালিটি এরিয়া, নোটিফায়েড এরিয়া বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় যদি 10 লক্ষের বেশি জনসংখ্যা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট এলাকার ৮ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনো জমি কৃষি জমি হিসেবে গণ্য হয় না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এই আইন জানা না থাকলে যেকোনো সময় যে কোনো ব্যক্তি আয়কর আইনের ফাঁদে পড়ে যেতে পারেন।
ইনকাম ট্যাক্স রুলস অনুযায়ী কৃষি জমি যেহেতু মূলধনী সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না, ঠিক সেই কারণেই কৃষি জমি থেকে আগত লাভ আয়কর আইনের আওতায় পড়ে না। কিন্তু যেহেতু শহরে এলাকার কৃষি জমিকে ইনকাম ট্যাক্স রুলস অনুযায়ী এগ্রিকালচারাল ল্যান্ড বা কৃষিজমি হিসেবে গণ্য করা হয় না। (Urban areas land are not Agricultural Land) তাই সেখান থেকে যেকোনো ধরনের লাভ আয়কর আইনের আওতায় পড়ে। ফলে নিয়ম অনুযায়ী এই সমস্ত এলাকায় যদি কোনো ধরনের চাষযোগ্য জমি থেকে থাকে, তাহলে ইনকাম ট্যাক্স এর আইন মেনে আয়কর প্রদান করতে হবে। তা না হলে যে কোনো সময় আয়কর বিভাগ হানা দিতে পারে।